বাংলা সাহিত্য পত্রিকা " সাহিত্য .কম "-এর সাহিত্য সংবাদ / Literary News পাতায় দীপ চ্যাটার্জী'র আলোচনা-- "ভিন্ন ধারার বই নিয়ে ভারত-বাংলাদেশ যৌথ সাহিত্যসভা, সম্মানিত অভীক গঙ্গোপাধ্যায়" । কলকাতা প্রেস ক্লাবে আমার ৪টি বই নিয়ে দুই বাংলার আলোচকদের মতামত ও সম্বর্ধনার দিনটি আমার কাছেও স্মরণীয়। ধন্যবাদ সম্পাদক তারিক সামিন। 09/10/2018 ভিন্ন ধারার বই নিয়ে ভারত-বাংলাদেশ যৌথ সাহিত্যসভা 09 October 2018 ভিন্ন ধারার বই নিয়ে ভারত-বাংলাদেশ যৌথ সাহিত্যসভা সম্মানিত অভীক গঙ্গোপাধ্যায় ২৬শে অগাস্ট, ২০১৮, রবিবার, সকাল ১১টা থেকে ২টো, কলকাতা প্রেস ক্লাবে চেতলা অঙ্কুর আর্ট অ্যান্ড কালচারাল ইন্সটিটিউট অফ ইন্ডিয়ার আয়োজনে অনুষ্ঠিত হল ব্যতিক্রমী লেখক অভীক গঙ্গোপাধ্যায়ের চারটি ভিন্নধারার বই নিয়ে একটি আলোচনাচক্র। অনুষ্ঠানটিকে ভারত-বাংলাদেশ যৌথ সাহিত্যসভা বললেও অত্যুক্তি হবে না―কারণ, সভার চারজন বক্তার মধ্যে দু’জন ছিলেন ভারতের এবং দু’জন বাংলাদেশের। এখানে উল্লেখ্য অভীকবাবু ৩০টি বইয়ের লেখক এবং সম্পাদক―যে বইগুলির বিষয়বৈচিত্র্য, কৃষ্টিভাবনা, শিল্পতত্ত্ব, সাহিত্যতত্ত্ব থেকে শুরু করে ভাষা, সমালোচনা সাহিত্য, এমনকি ভারততত্ত্ব পর্যন্ত বিস্তৃত। এই বিরাট পরিসরে এই পরিমাণ কাজের স্বীকৃতিও তিনি পেয়েছেন সারা বিশ্ব থেকে। ২০০২-তে অভীক গঙ্গোপাধ্যায়কে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের “লাইব্রেরি অফ পোয়েট্রি” থেকে, কবিতা নিয়ে তাঁর কাজের জন্য দেওয়া হয় “এডিটরস চয়েস অ্যাওয়ার্ড।” ভাষার মৃত্যু, ডায়াস্পোরা ও অভিঘাত সাহিত্য, ভারততত্ত্ব প্রভৃতি স্বকীয় বিষয়ে তাঁর গবেষণালব্ধ কাজের জন্য তিনি পুরস্কৃত হয়েছেন, স্কটল্যান্ডের “এডিনবরা বিশ্ববিদ্যালয়”, জার্মানির “হেনরিখ হাইনে বিশ্ববিদ্যালয়”, ফ্রান্সের “সরবয়েঁ বিশ্ববিদ্যালয়”, কানাডার “ইন্দো কানাডিয়ান ডায়াস্পোরা কনফেডারেশন”, “সেন্টার ফর রিভাইটালাইজেশন অফ এনডেঞ্জারড ল্যাঙ্গুয়েজেস”, বাংলাদেশের “রাঢ় ও বরেন্দ্র ভাষা সংস্কৃতি চর্চা পরিষদ”, “বরেন্দ্র রিসার্চ সোসাইটি”, ভারতের “বরদা সিদ্ধি পীঠম” প্রমুখ প্রথিতযশা প্রতিষ্ঠান থেকে। এছাড়াও অভীকবাবুর বই এবং তাঁর লেখকসত্তা নিয়ে “দ্য টাইমস অফ ইন্ডিয়া”, “দ্য হিন্দুস্তান টাইমস”, “দ্য স্টেটসম্যান”, “আনন্দবাজার পত্রিকা”, “বইয়ের দেশ”, “সাপ্তাহিক বর্তমান”, “এই সময়”, “একদিন”, “ডেইলি অবসার্ভার” (বাংলাদেশ ও ফ্রান্স), “বাংলাদেশ পোস্ট”, “ঢাকা রিভিউ” ও অন্যান্য প্রথম সারির পত্রপত্রিকা, ই-জার্নালে অনেক আলোচনা, সাক্ষাৎকার, নিবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে। এই মাপের একজন লেখকের রত্নসমৃদ্ধ পুস্তক-সায়র থেকে চারটি নির্বাচিত গ্রন্থ নিয়ে প্রেসক্লাবের উক্ত অনুষ্ঠানটি আয়োজিত হয়েছিল। বইগুলি হল―“ভাষার মৃত্যু”, “ডায়াস্পোরা অ্যান্ড ট্রমা লিটারেচার”, “সং অফারিংস অ্যান্ড গীতাঞ্জলী” এবং “সরস্বতী”। অনুষ্ঠানের বিগদ্ধ আলোচকবৃন্দ ছিলেন বাংলাদেশের নতর্দ্যম বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরাজি ভাষার অধ্যাপক আহমেদ তাহসিন শামস, ভারতীয় শিল্প এবং সঙ্গীতের স্বতন্ত্র গবেষক ডঃ অভিজিৎ মজুমদার, তুলনামূলক সাহিত্য এবং ভারততত্ত্বের স্বতন্ত্র গবেষক শ্রী জয়দীপ মুখার্জি এবং বাংলাদেশের সাংবাদিক ও সাহিত্য সমালোচক নাজমুন নাহের শিশির। সমগ্র অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেছেন মৌলানা আবুল কালাম ইউনিভার্সিটি অফ টেকনোলজির অধীনস্থ জর্জ কলেজের মিডিয়া সায়েন্স বিভাগের অধ্যাপিকা সোমা দত্ত। অনুষ্ঠানের শুরুতে প্রথম বক্তা আহমেদ তাহসিন শামস অভীকবাবুর দু’টি গ্রন্থ―“ভাষার মৃত্যুঃ লুপ্ত ও বিপন্ন ভাষার খোঁজ” এবং “ডায়াস্পোরা অ্যান্ড ট্রমা লিটারেচার” নিয়ে আলোচনা করেন। তাঁর বক্তব্য মূলতঃ ছিল অপেক্ষাকৃতভাবে স্বল্পালোচিত বা অনালোচিত কিছু আন্তর্বিভাগীয় বিষয় সম্পর্কে অভীক গঙ্গোপাধ্যায়ের বিশেষ গুরুত্ববহ কাজ নিয়ে। এই ধরণের গবেষণায় অভীকবাবু ইতিহাস, মনস্তত্ত্ব, সাহিত্যের নৃতত্ত্ব প্রভৃতি বিষয়কে নিখুঁত নৈপুণ্যে ফুটিয়ে তুলেছেন তাঁর স্বকীয় ভাবনায়। এই সূত্র ধরেই বক্তা অভীকবাবুর উক্ত গ্রন্থদ্বয়ে ভাষার মৃত্যু, যে ভাষাগুলি হারিয়ে গিয়েছে তাঁর প্রমাণ এবং লিপি, ভাষার পুনরুজ্জীবন এবং সারা বিশ্বজুড়ে বাস্তুহারা, ছিন্নমূল মানুষের অভিঘাতের তথ্যসমৃদ্ধ তাৎপর্যপূর্ণ উল্লেখের কথা আলোচনা করেন। এই গম্ভীর এবং মর্মস্পর্শী বিষয়ের অনন্যসাধারণ আলোচনার পর অনুষ্ঠানের দ্বিতীয় বক্তা ডঃ অভিজিৎ মজুমদার, অভীকবাবুর সম্পূর্ণ ভিন্নধারার একটি কাজ নিয়ে তাঁর বক্তব্য রাখেন―“সং অফারিংস অ্যান্ড গীতাঞ্জলী”। বক্তা নিজে একজন সঙ্গীত গবেষক হওয়ার দরুণ সাঙ্গিতিক দৃষ্টিকোণ থেকে তিনি এই কাজের বিশ্লেষণ করেন এবং দেখিয়ে দেন কীভাবে অভীকবাবু রবীন্দ্রনাথের এই যুগান্তকারী সৃষ্টিকে, স্থানান্তর-সৃষ্টিতত্ত্বের ধারণার মাধ্যমে বিশ্লেষণ করে রবীন্দ্রগবেষণায় এক নতুন পথের সন্ধান দিয়েছেন। অভীকবাবু পরে এই প্রসঙ্গে বলেন, “রবীন্দ্রনাথ শুধুমাত্র বাংলা থেকে ইংরাজিতে তাঁর কাজের অনুবাদই করেন নি, সাথে নতুন ভাষায় তাঁর সৃষ্টির পুনর্জন্ম ঘটিয়ে সেগুলিকে স্বকীয় মর্যাদা দিয়েছেন।” অনুষ্ঠানের তৃতীয় বক্তা শ্রী জয়দীপ মুখার্জি, অভীকবাবুর আরেকটি ভিন্নধারার বই নিয়ে আলোচনা করেন “সরস্বতীঃ প্রত্নতাত্ত্বিক, সাংস্কৃতিক, নৃতাত্ত্বিক, নান্দনিক প্রেক্ষিত”। ভারততত্ত্ব গবেষক জয়দীপবাবু তাঁর এই আলোচনায় বিশেষভাবে উল্লেখ করেন, “সরস্বতী”-র দ্বিতীয় সংস্করণে দু’টি নতুন তাৎপর্যপূর্ণ অধ্যায়ে অভীকবাবু প্রচুর তথ্যপ্রমাণ সহ “আর্য আক্রমণ তত্ত্ব” নামক এক বহুল প্রচলিত মিথ্যা তত্ত্বকে সফলভাবে খণ্ডন করে আলোতে নিয়ে এসেছেন বহুবছর ধরে অন্ধকারে লুকিয়ে রাখা এক ঐতিহাসিক সত্যকে। প্রাচীনকালে কোন বিদেশী জাতি আক্রমণ আর গণহত্যা করে ভারতের সভ্যতা-সংস্কৃতি সৃষ্টি করেনি। নদীর জন্যই ভারতে প্রস্তর যুগ থেকে সভ্যতার যুগে উত্তরণ। প্রাকৃতিক কারণে অধুনা হারিয়ে যাওয়া সেই নদীই সরস্বতী, যাকে কেন্দ্র করে একসময় গড়ে উঠেছিল “সরস্বতী সভ্যতা”। অনুষ্ঠানের অন্তিম বক্তা সাংবাদিক ও সাহিত্য সমালোচক নাজমুন নাহের শিশির, সাম্প্রতিককালে অভীকবাবু বিভিন্ন ই-জার্নাল এবং পত্র-পত্রিকায় বিভিন্ন সমসাময়িক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে তাঁর নিজস্ব বিশ্লেষণ এবং বিভিন্ন ধ্রুপদী সাহিত্য গ্রন্থ নিয়ে যে বিদগ্ধ আলোচনা করছেন, সেই নিয়ে বক্তব্য রাখেন। তিনি দেখিয়ে দেন কীভাবে এতো পাণ্ডিত্যপূর্ণ লেখা হওয়ার সত্ত্বেও, শুধুমাত্র অভীকবাবুর স্বকীয় উপস্থাপনার গুণে, সেগুলি শুধু অ্যাকাডেমিক মহলেই নয়, সাথে সাধারণ পাঠকের মধ্যেও উৎসাহ সৃষ্টি করে জনপ্রিয় হয়েছে। অনুষ্ঠানের শেষে, অভীক গঙ্গোপাধ্যায় স্মৃতির সরণী বেয়ে, তাঁর এই সাহিত্য চর্চা, গবেষণা এবং এত স্বকীয় কাজের দীর্ঘ যাত্রাপথের কথা স্মরণ করে সবাইকে সমৃদ্ধ করেন। বক্তাদের স্মারক দেবার পাশাপাশি অভীকবাবুর হাতে International Language Preservation & Endangered Language Alliance প্রদত্ত “Certificate of Honor” তুলে দেন আহমেদ তাহসিন শামস। আলোচক : দীপ চ্যাটার্জী রামকৃষ্ণ-বিবেকানন্দ এবং ভারতীয় সংস্কৃতি বিষয়ে উৎসাহী আলোচক। অধ্যাত্ম দর্শন ও সমাজবীক্ষার পাশাপাশি বঙ্কিমী-শৈলীর যথার্থ প্রয়োগে বুদ্ধিদীপ্ত সরস ব্যঙ্গরচনায় সুলেখক পাঠকমহলে এক পরিচিত নাম। deepchatterjee2007@gmail.com আয়োজনে : চেতলা অঙ্কুর আর্ট অ্যান্ড কালচারাল ইন্সটিটিউট, কলকাতা